কক্সবাজারের ২০টি দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সরকারি ভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায় ২০২৪কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ঘুরতে যাওয়ার আগে থেকেই আমাদের জেনে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলা হল সবথেকে সুন্দর এবং পর্যটক স্থান একদিক থেকে সবথেকে এগিয়ে কিন্তু অনেকেই কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখেনা। তাই আজকে এই আর্টিকেলে কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে আলোচনা করব.
কক্সবাজারের ২০টি দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

তাহলে চলুন দেরি না করে কক্সবাজারের দর্শনের স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক আপনারা যদি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়েন তাহলে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন

কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান

প্রতিবছর বাংলাদেশসহ বাংলাদেশের বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসে কক্সবাজার ঘুরতে কক্সবাজার হল বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর একটি জেলা। কক্সবাজার পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কিন্তু কক্সবাজার ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে শুধু সমুদ্র সৈকত নয়। বরং ঘুরে দেখবেন আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান আপনার সময় সুযোগ সুবিধা বুঝে পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। কক্সবাজার এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থানগুলো উল্লেখযোগ্য হল-

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতঃ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত নিয়ে কথা বলতেই প্রথমে মাথায় আসে। এটি পৃথিবীর সর্ব বৃহত্তম একটি সমুদ্র সৈকত এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটক স্থান ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বৈশিষ্ট্য এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে শুধু বালু রয়েছে কাদার কোন অস্তিত্ব এখানে পাওয়া যায় না। এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত রয়েছে আধুনিক সব হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট প্রতিবছর এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা হয়ে থাকে।

ইনানী সমুদ্র সৈকতঃ
কক্সবাজার থেকে এটি ২৩ কিলোমিটার আর হিমছড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ইনানী বীচ ইনানী সমুদ্র সৈকত বা ইনানী বীচ প্রবল পাথরের ছড়াছড়ি অনেকটা সেন্টমার্টিন এর মতই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মতো এখানে বড় বড় ঢেউ থাকে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটা শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী বীচ যা পর্যটকদের আরো বেশি মুগ্ধ করে । সাধারণত সাগরে নামতে না চাইলে বা সে রকম পরিকল্পনা না থাকলে ইনানী সৈকতে যেতে পারেন বিকেল বেলায়।


পড়ন্ত বিকেলের শান্ত সাগর আপনার সামনে তুলে ধরবে তার বিশালতা। সূর্যাস্তটাও উপভোগ করে ফিরতে পারেন। বিকেলে জোয়ার থাকে বলে সাধারণত অন্য সময়ের তুলনায় সে সময়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় কিছুটা কম থাকে। সাগর যেখানে নিজের ভাষায় কথা বলছে সেখানে মানুষের কোলাহল কিছুটা কম থাকাই কাম্য। জোয়ারের সময় এলে পাথরগুলো দেখা যায় না কিন্তু ভাটার সময় কেবলমাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে থাকে এই পাথর পাথরে লেগে থাকা ।

ইনানী সৈকতে প্রধান আকর্ষণীয় হল পাথর প্রতিটি পাথরে নানা আকারের হয়ে থাকে কত বছরের পুরনো সে পাথর। আর তাতে মিশে আছে কত স্মৃতি আর আপনি যদি টেকনাফগামী মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে ইনানী বীচে যাবার সময় হিমছড়ির পাহাড়, সমুদ্র তীরের সাম্পান, নারিকেল ও ঝাউবন গাছের সারি আর চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আপনার ভ্রমণের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠবে।

কক্সবাজার কলাতলী বিচঃ
কলাতলী বিচ কক্সবাজারের আরেকটি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। এটা কক্সবাজারের মধ্যে অবস্থিত। এটি হলো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের একটি সি বিচ পয়েন্ট। কলাতলী বিচে নানা ধরনের খাবারের রেস্টুরেন্টসহ আরো অনেক পর্যটন সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে চাঁদনি রাতে বিচে হাঁটা সত্যিই রোমঞ্চকর সকল বয়সী মানুষের জন্যই। সকাল এবং সন্ধ্যাতে এখানে উপভোগের জন্য রয়েছে নানা ধরনের শুকনো মাছ, খাবার ইত্যাদি।

রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ডঃ
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ফিস অ্যাকুরিয়াম দেখার সুযোগ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত একটি ফিস  অ্যাকুরিয়াম এবং ফিস মিউজিয়াম এই  অ্যাকুরিয়াম কমপ্লেক্সে আছে সাগর ও মিঠা পানির প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ বিরল প্রজাতির মাছ সহ। এখানে আছে আঙ্গুর শাপলা পাতা পান পাতা কাঁকড়া সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরী, সাগর কুঁচিয়া, বোল, জেলিফিস, চেওয়া, পাঙ্গাস, আউস সহ আরও অনেক মাছ ও জলজ প্রাণী।

ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুকুর ও সাগরের তলদেশে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ প্রায় দুই ঘন্টা লাগবে এই মেরিন ফিস অ্যাকোরিয়াম পুরোটা ঘুরে দেখতে।  অ্যাকুরিয়াম ঢুকলে মনে হবে আপনি সাগরের তলদেশে আছেন আর আপনার চারপাশে নানা প্রজাতির রঙ্গে বেরঙ্গে মাছ খেলা করছে। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড মালয়েশিয়ায় টেকনিক্যাল প্রকৌশল এর সহায়তায় নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের।

এই  অ্যাকুরিয়াম নির্মাণের সময় লেগেছে দুই বছর এই  অ্যাকুরিয়াম বঙ্গোপসাগরের থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মৎস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। অচেনা এই বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছ রয়েছে সাগরের বিলুপ্ত মাছ বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণে একটি জাদুঘর ও করা হয়েছে। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয় এটি সমুদ্র সৈকতের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পর্কে জানার একটি শিক্ষা কেন্দ্র ।

এই ফিশ ওয়ার্ল্ডে প্রবেশের জন্যে ফি ৩০০ টাকা। এছাড়া থ্রিডি শো এর টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে।

হিমছড়ির ঝর্ণাঃ
কক্সবাজার গিয়েছেন কিন্তু হিমছড়িতে যাননি কিংবা হিমছড়ির নাম শুনেন নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত হিমছড়ি ইকোপার্ক পর্যটন কেন্দ্র। হিমছড়ি ঝর্ণা দেখতে হলে আপনাকে হিমছড়ি ইকোপার্কে প্রবেশের জন্য ২০/- টাকার টিকেট কাটতে হবে।

হিমছড়িতে অবস্থিত হিমছড়ি ছোট বড় ঝর্ণা পাহাড় আর ফটোগ্রাফিক সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের মনকে প্রফুললিত করে রাখে। শীতল পানির ঝর্ণা, মেরিন ড্রাইভ রোড এবং বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত দেখতে আপনাকে হিমছড়ি আসতেই হবে। সারাবছরই হিমছড়িতে যেতে পারবেন। এখানে একটি ছোট ঝর্না রয়েছে যা হিমছড়ি ঝর্ণা নামে পরিচিত।

ঝর্নাটি ছোট কিন্তু বর্ষামৌসুমে এটি দারুন রূপ ধারন করে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সবুজে ঘেরা মেরিন ড্রাইভ রোড আর পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে সূর্য্যাস্ত উপভোগ করার ব্যবস্থা। এছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে ইকোপার্কের প্রবেশ মুখের বার্মিজ মার্কেট থেকে পছন্দের কেনাকাটা করে নিতে পারেন সহজেই।

রামু বৌদ্ধবিহারঃ
কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা হচ্ছে রামু। পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ রামুতে রয়েছে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন। রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে। রামুর উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। আর মাত্র দুই কিলোমিটার অদূরেই কেন্দ্রীয় সীমাবিহার নতুন করে নির্মিত হয়েছে।

কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই রয়েছে নজরকাড়া লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার। বৌদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যে রামুর লামারপাড়া ক্যাং, কেন্দ্রীয় সীমা বিহার (১৭০৭), শ্রীকুলের মৈত্রী বিহার (১৯৮৪), অর্পন্নচরণ মন্দির, শাসন ধ্বজামহাজ্যোতিঃপাল সীমা (১২৮৯বাংলা), শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহার, শ্রীকুলেরচেরেংঘাটা বড় ক্যাং, (রোয়াংগ্রী ক্যাং ১৮৮৫) সংলগ্ন মন্দিরসমূহ, দক্ষিণ শ্রীকুলের সাংগ্রীমার ক্যাং সংলগ্ন মন্দিরসমূহ, রামকৌট বনাশ্রম বিহার।

দেখার মত ঐতিহ্যবাহী ও উল্লেখযোগ্য মন্দির ও বিহার গুলো হলো উত্তর মিঠাছড়ি ১০০ ফুট বৌদ্ধ মূর্তি, রামু সীমা বিহার, লামার পাড়া বৌদ্ধ বিহার, রাংকূট বৌদ্ধ বিহার, শ্রী শ্রী রামকুট তীর্থ ধাম ও শ্রীকুল পুরাতন বৌদ্ধ বিহার ইত্যাদি। এছাড়া রামু রাবার বাগান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

সেন্টমার্টিনও ছেড়া দ্বীপঃ
সেন্টমার্টিন দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সেন্টমার্টিন দ্বীপ, বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবাল দ্বীপ। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলেও ডাকা হয়।

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। অসীম নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ। এই দ্বীপকে করেছে অনন্য, যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়। সেন্টমার্টিনের আসল মজা একরাত না থাকলে উপভোগ করা সম্ভব নয়।

আরো ভাল হয় দুইরাত থাকলে। সেক্ষেত্রে ১টা দিন ছেড়া দ্বীপের জন্য, আরেকটা দিন সেন্টমার্টিনের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। প্রতিদিনের পর্যটকরা বিকেলের মধ্যেই ফিরে যায়, তাই বিকেলের পর থেকে দ্বীপে ঘুরে বেরানোর মজাই আলাদা। আর যদি ভরা পূর্ণিমায় যেতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই, রাতের বেলা সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপে ঘুরে বাড়াবেন আর বাঁচার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে নিবেন।

কক্সবাজার লাবনী বিচঃ
কক্সবাজার পুরাতন সমুদ্র সৈকত যা আজকে লাবনী পয়েন্ট অথবা লাবনী বিচ নামে পরিচিত। কক্সবাজার লাবনী বিচ কক্সবাজারের কলাতলীতে অবস্থিত। যারা সমুদ্র দেখতে ভালোবাসে এবং দূর দূরান্ত থেকে সমুদ্র দেখতে আসে সাধারণত তারা কক্সবাজার লাবনী বীজে ছুটে যাই। কক্সবাজার শহর থেকে খুবই নিকটতম স্থানে লাবনী বীচ অবস্থিত। এছাড়া এখানে পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠেছে ঝিনুক মার্কেট। সীমান্তপথে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন প্রভৃতি দেশ থেকে আসা বাহারি জিনিসপত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে এই মার্কেট।

কক্সবাজার কুদুম গুহাঃ
কুদুম গুহা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন গুহা। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ আসার পথে হোয়াইক্যং পাহাড়ে কুদুম গুহার অবস্থান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির গুহা। মনোরম পাহাড় ঘেরা পরিবেশ, পাখির ডাক আর বন্যপ্রাণীর আনাগোনাময় এই গুহাটি পর্যটকদের কাছে দারুন আকর্ষণীয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ফুট উপরে অবস্থিত এই কুদুম গুহার দৈর্ঘ্য ৫০০ ফুট এবং প্রবেশ মুখ ১২ ফুট উচু।

কুদুম গুহাকে স্থানীয়দের কাছে কুদুং নামে বেশি পরিচিত। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির শামুক, মাকড়সাসহ জলচর জোঁকসহ নানা প্রাণীদের বসবাস এই গুহাতে। এই গুহার ভেতরে ঢুকলে কোথাও হিম শীতল জলের দেখা মিলবে আবার কোথাও কোমর আবার কোথাও গলা সমান পানি পাবেন। গুহার দেয়ালের গা বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে অনবরত পানি ঝরে। গুহার যত ভিতরে প্রবেশ করবেন পানির গভীরতা তত বাড়তে থাকবে।

শুকনো মৌসুমেও কুদুম গুহার ভিতর কোমর সমান পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় সেটা প্রায় গলা পরিমাণ হয়ে যায়। গুহার পানি বেশ ঠাণ্ডা তবে স্বচ্ছ। এই স্বচ্ছ মিষ্টি পানিতে রয়েছে বড় বড় টাকি জাতীয় মাছ, কৈ, কাকলি, তিন চোখা, ডানকিনে কালো রঙের চিংড়ি, নানা রকমের ব্যাঙ, গুগলি আর শামুক ইত্যাদি। কুদুম গুহার ভিতর এতটাই অন্ধকারচ্ছান্ন যে জোরালো আলো ছাড়া এর ভিতরে কিছুই দেখা যায় না।

এই এলাকায় বিচরণ করে বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ বন্য হাতি। এলাকাটিতে মূলত চাকমা গোষ্ঠীর বসবাস। এই অঞ্চলটির সাথেই লাগানো মিয়ানমার সীমান্ত।

শামলাপুর সমুদ্র সৈকত ঃ
টেকনাফের কাছে বাহারছড়া ইউনিয়নের পাশের শামলাপুর সমুদ্র সৈকত। মাছধরার নৌকা আর জেলেরা ছাড়া সেই ভাবে কোনো মানুষজন চোখে পড়বে না, ঝাউবনে পাওয়া যাবে সবুজ ছোঁয়া। কেউ কেউ একে বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও ডেকে থাকে। এখানকার দৃষ্টি নন্দন ঝাউবনে ঘেরা অপরূপে শোভিত নির্জন সৈকতে এসে ভালো লাগার ১৬ আনাই পাবেন।

এখানে নির্জনতাও একটা বড় ব্যাপার। কক্সবাজার, হিমছড়ি বা ইনানীতে কত মানুষের ভীড়। আর হৈহুল্লোড়। এখানে তার কিছুই নেই। পড়ন্ত বেলায় মাছ ধরার ট্রলারগুলো টেনে তীরে তোলার দৃশ্য, জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা, স্থানীয় শিশুদের চিৎকার আর দৌড়ঝাঁপের মধ্যে চোখে পড়বে শুধুই সমুদ্র আর তার নীল জলরাশির শোঁ শোঁ গর্জন।

মহেশখালী দ্বীপ ঃ
মাহেশখালী কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্য অন্যতম। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ এটি। কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত মহেশখালী উপজেলায় এর অবস্থান। লোকমুখে জানা যায় যে, ১৫৫৯ সালে একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের ফলে এই দ্বীপের সৃষ্টি হয়। মহেশখালী দ্বীপ কক্সবাজার জেলার একটি পাহাড়ি দ্বীপ যা কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝে অবস্থিত।

প্রায় ৩৬২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মহেশখালী উপজেলায় সোনাদিয়া। মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এই দ্বীপটি আবার ৩টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতি বছরের ফাল্গুন মাসে এই দ্বীপে আয়োজন করা হয় আদিনাথ মেলা। মহেশখালীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম –
  • সোনাদিয়া দ্বীপ
  • আদিনাথ মন্দির ও আদিনাথ মেলা
  • বৌদ্ধ কেয়াং বা মন্দির
  • রাখাইন পাড়া
  • স্বর্ণ মন্দির
  • মৈনাক পর্বত
ধারনা করা হয়, প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বরের আম অনুসারে এই স্থানটির নামকরণ হয় মহেশখালী। যদিও অনেকের মতে, শিবের অপর নাম মহেশ এবং এই শিবের নাম অনুসারে জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে মহেশখালী।

রামু রাবার বাগানঃ
কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে ঐতিহ্যবাহী রামু রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৬০-৬১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহায়তায় অনাবাদি জমি গবেষণার মাধ্যমে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু করা হয়। ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলা ও বিস্ততিত সমতল পাহাড়ের মাঝে ২,৬৮২ একর জায়গা জুড়ে বিস্ততিত রামু রাবার বাগানের চারপাশে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি।

শুরুর দিকে বাগানে ৫৮,০০০টি উৎপাদনক্ষম রাবার গাছ থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১,৪০,০০০ টি গাছ রয়েছে। একটি রাবার গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করতে পারে এবং ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদন ক্ষমতা হারায়। রাবার বাগানের এসব গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদিত হয়।

বর্তমানে এই বাগানটি দেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রাবার বাগান ও রাবারের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে রামু বাগানে ঘুরতে আসেন। রামু রাবার বাগানের খোলামেলা পরিবেশ পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

কক্সবাজার জেলের ২০টি দর্শনীয় স্থানের নাম

উপরের আলোচনায় আমরা ইতিমধ্যেই কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনেছি। এখন কক্সবাজার জেলার ২০টি দর্শনীয় স্থান নাম সম্পর্কে আলোচনা করব। আমরা জানি যে কক্সবাজার হল বাংলাদেশের মধ্যে সবথেকে সুন্দর একটি জেলা। এখানে রয়েছে পৃথিবীর সব থেকে বড় সমুদ্র সৈকত। এছাড়া আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। নিচে উল্লেখ করা হলো-

১। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

২। সেন্টমার্টিন, ছেঁড়া দ্বীপ

৩। ইনানী সমুদ্র সৈকত

৪। রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

৫। মহেশখালী দ্বীপ

৬। হিমছড়ি ঝর্ণা

৭। সোনা দিয়া দ্বীপ

৮। সাহপরীর দ্বীপ

৯। রামু রাবার বাগান

১০। লামাপাড়া খিয়াং

১১। রামু বৌদ্ধবিহার

১২। আদিনাথ মন্দির

১৩। কুতুবদিয়া দ্বীপ

১৪। শামলাপুর সমুদ্র সৈকত

১৫। ডুলাহাজার সাফারি পার্ক

১৬। কালাতলী বিচ 

১৭। ঝিনুক মার্কেট

১৮। কুতুবদিয়া বাতিঘর

১৯। চৌফলদভী সেতু

২০। লামার পাড়া বৌদ্ধবিহার

কক্সবাজার ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়

ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে বছরের প্রত্যেকটা দিনই ভ্রমণযোগ্য দিন মনে হলেও, পরিবেশ পরিস্থিতির বিবেচনায় শীতকালকেই ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় বলে ধরা করা হয়। আপনি যদি কক্সবাজার ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে বলব অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় কক্সবাজার ভ্রমণ করবেন। কারণ এই সময়টিকেই কক্সবাজার ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই সময় রোদের তেমন তেজ থাকে না যার ফলে আপনি আরামে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন পায়ে হেঁটে। কারন এ সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, বৃষ্টিপাত কম হয় আর বোনাস হিসেবে পাওয়া যায় বাচ্চা-কাচ্চার স্কুল থেকে শীতকালিন ছুটি। তাইতো এই শীতকালটাকে ধরা হয় কক্সবাজার ভ্রমণের পিক সিজন

কক্সবাজার জেলার নামকরণের ও ইতিহাসঃ

উপরের আলোচনা থেকে আমরা ইতিমধ্যেই কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা রয়েছে। এই ৬৪ টি জেলার মধ্যে অন্যতম হলো কক্সবাজার জেলা। সাধারণত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ কক্সবাজার জেলা চেনে কারণ এখানে রয়েছে পৃথিবীর সব থেকে বড় বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। কিন্তু অনেকেই কক্সবাজার জেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানেনা।

কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর মৎস্যবন্দর এবং পর্যটক কেন্দ্র এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তর । কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত, যা ১২০ কি.মি. পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল লেন্ডিং স্টেশন ।কক্সবাজারের প্রাচীন নাম পালংকী। একসময় এটা প্যানোয়া নামে পরিচিত ছিল ।

প্যানোয়া নামেও পরিচিত ছিল যার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে হলুদ ফুল। অতীতে কক্সবাজারের আশেপাশে এলাকাগুলো এই হলুদ ফুলে ঝকমক করত। ইংরেজ অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে এখানে একটি বাজার স্থাপন করেন। কক্স সাহেবের বাজার থেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি। আরব ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ অষ্টম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন।

এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হত। ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চন্দ্র চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল। ১৬৬৬ সালে মুঘলরা চট্টগ্রাম দখল করে নেয়।

মুঘল সেনাপতি বুজুর্গ ওমেদ খান কর্ণফুলির দক্ষিণের মাঘ কেল্লা দখল করে নেন এবং আরাকানবাসী রামু কেল্লাতে আশ্রয় নেয়, যা কিনা পরে মুঘলরা হঠাৎ আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কক্সবাজারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চাষীদের মাঝে জমি বিতরণের এক উদারনৈতিক পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে চট্টগ্রাম ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই এলাকায় আসতে থাকে। বার্মা রাজ বোধাপায়া (১৭৮২-১৮১৯) ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল করে নেন।

প্রায় ৩০ হাজার আরাকানী বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৭৯৯ সালে কক্সবাজারে পালিয়ে যায়। এদের পুনর্বাসন করতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেয়। প্রতি পরিবারকে ২.৪ একর জমি এবং ছয় মাসের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছিল। এ সময় ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা কক্স সাহেবের বাজার হিসেবে পরিচিত হয় স্থানীয়দের মাঝে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তার অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকেই কক্সবাজার জেলার নামের উৎপত্তি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান, কক্সবাজার ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়, কক্সবাজার জেলার ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করে থাকেন তাহলে অবশ্যই উপরোক্ত বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেবেন।


এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো জানতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। কারণ আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url