ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহারড্রাগন ফল হচ্ছে একপ্রকার ক্যাকটাস জাতীয় ফল। এই ফল পিটাইয়া নামেও পরিচিত। ড্রাগন ফলের চাষ এখন দেশেই হচ্ছে। ফলে এর দেখা মিলছে এখন প্রায় সবখানেই। ড্রাগন ফল দুই ধরনের হয়, যেমন ভেতরের অংশ লাল ও সাদা। দেখতে ও খেতে চমৎকার হওয়ার পাশাপাশি ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা অনন্য ফলের থেকে বেশী। জেনে নিন ড্রাগন ফল সম্পর্কে,
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
প্রিয় পাঠক , ড্রাগন গাছের পাতা নেই। এছাড়াও ড্রাগন ফলের গাছ ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আপনি যদি এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জানতে পারবেন। ড্রাগন ফল সম্পর্কে ও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

বিদেশি ফল হলেও দ্রুতই আমাদের দেশে পরিচিতি লাভ করেছে ড্রাগন। এটি আসলে এক ধরনের ক্যাকটাস ভিত্তিক ফল। ড্রাগন ফল খনিজ, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সেইসঙ্গে কমায় ক্যান্সারের ঝুঁকিও।আকর্ষণীয় ও সুস্বাদু এই ফলের চাহিদা আমাদের দেশে বেড়েই চলেছে।
ফলটি কেটে খাওয়ার পাশাপাশি স্মুদি, মিল্কশেক, সালাদ ইত্যাদি তৈরি করেও খেতে পারেন। জেনে নিন ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

বর্তমানে ড্রাগন ফল অতি পরিচিত একটি ফল নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে ফলটি দেখতে যেমন চমৎকার তেমন খেত সুস্বাদু মিষ্টি ও রসালো আসুন এই ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেই আমরা।
  • ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে।
  • এটি ডাইবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী ফল। এই ফল রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
  • ড্রাগন ফলের প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ পাওয়া যায়। সাধারণত আমরা মাছের মধ্যে ওমেগা ৩ পেয়ে থাকি তবে এই ফল খেলে শরীরের ওমেগা 3 এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এই ফল জুড়ে মেলা ভার। এতে রয়েছে ভিটামিন এ তাছাড়া বিটা ক্যালরিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং চুল ভালো রাখে।
  • ড্রাগন ফলে রয়েছে ফাইবার যা রক্তের চর্বি কমায় ফলে হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে। তাছাড়া এই ফল হজমে সাহায্য করে।
  • এই ফল আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় রক্ত হিমোগ্লোবিন বাড়তে সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের লাইকোপেন থাকায় ক্যান্সার বিরোধী হিসাবে কাজ করে।
  • ডায়েটের ড্রাগন ফলে রাখলে বেশ উপকারে পাওয়া যায় কারণ এতে রয়েছে জিরো ফ্যাট ও কম ক্যালরি
  • শরীরের ক্ষতিকর ও ভালো ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • ড্রাগন ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা আমাদের সুরক্ষায় জন্য বেশ কার্যকর।

১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলের মধ্যে যে পরিমাণ উপাদান থাকে

  • প্রোটিন ০.১৫ থেকে ০.৫ গ্রাম
  • আয়রন ০.৩ থেকে ০.৭ মিলিগ্রাম
  • শর্করা ৯ থেকে ১০ গ্রাম
  • ফসফরাস ১৬ থেকে ৩৫ গ্রাম
  • জল ৮০ গ্রাম
  • ভিটামিন বি ৩ এবং ০.২ থেকে ০.৪ মিলিগ্রাম
  • খাদ্য শক্তি - ৩৫ থেকে ৫০ কিলোক্যালোরি
  • ক্যালসিয়াম - ৬ থেকে ১০ মিলিগ্রাম
  • ফ্যাট - ০.১০ থেকে ০.৬ মিলিগ্রাম
  • আঁশ ০.৩৩ থেকে ০.৯০ গ্রাম
  • ক্যারোটিন -- অল্প
  • ভিটামিন এ -- অল্প
  • থায়ামিন -- অল্প
  • রিবোফ্লামিন -- অল্প

রূপচর্চায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা

বর্তমান সময়ে অধিক জনপ্রিয় ফল হচ্ছে ড্রাগন ফল যার গুনে কোন শেষ নেই। এই ফল স্বাস্থ্য সুস্থ ভালো রাখার জন্য যেমন উপকারী তেমনই ত্বকের যত্নের জন্য উপকারি। এ যেন এক সর্বগুণ সম্পন্ন ফল যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

ব্রণঃ ড্রাগন ফল ব্রণ কমাতে সাহায্য করে এর রস তোকে লাগে ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায় কারণ এটা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকের ময়লা দূর করে এবং শুষ্কতা ও উজ্জ্বল তা বাড়িয়ে তোলে।

মশ্চারাইজারঃ ড্রাগন ফলের রস ও একটু টক দই মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন এবং এই ব্যক্তি গলায় এবং মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন এরপরে শুকিয়ে গেলে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন কারণ এতে হাইড্রোটিন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার ফলে ত্বক নরম ও কমল থাকে।

কোলাজেল উৎপাদনঃ ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকায় ত্বকে ব্যবহার করলে কোলা জলে উৎপাদনে পড়তে সাহায্য করে। কোলাজল ত্বকের উজ্জ্বলতা আকর্ষণীয় করে তুলে।

রোদে পোড়া ভাব দূর করতেঃ রোদে কাজ করলে অনেক সময় ত্বকের পোড়া ভাব বা টান টান দেখা দেয়। ড্রাগন ফলের রসের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা উপকার পাওয়া যায়।

বয়সের ছাপঃ ড্রাগন ফল ব্যবহার করে ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করতে ও কমাতে সাহায্য করে। অর্ধেক ড্রাগনের সাথে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এই প্যাক মুখে ও গলায় লাগিয়ে 15 মিনিট রাখতে হবে এরপর ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে হবে এর ফলে ত্বক টানটান ও বয়সে ছাপ দূর হয়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভবতী নারীর জন্য খুবই উপকারী এই ড্রাগন ফল ড্রাগন ফল খাওয়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা গুলো কাজে লাগাতে পারেন। এই ফল খাওয়ার ফলে গর্ভের বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। অন্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফল অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল এতে ভিটামিন বি এবং আইরন রয়েছে। তাই এটি গর্ভবতী নারীদের জন্য আদর্শ ফল বলা জেতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। যার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একজন গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী প্রয়োজন হয়।
ম্যাগনেসিয়ামের উৎসঃ ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম যা একজন গর্ভবতী মহিলা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে। ফলে স্টক এর ঝুঁকি বাড়ে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে হৃদরোগ ও স্টকের ঝুঁকি কমে যায়। তাছাড়া ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার অংশ জরিতো রয়েছে। ড্রাগনে ডিএনএ গঠনে অংশ নেয় বেশি সংকোচন ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে।আর এই ম্যাগনেসিয়ামের আদর্শ হল ড্রাগন ফল।

ফাইবারঃ গর্ভাবস্থায় মহিলারা প্রায় কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় ভোগেন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সর্বদা ফাইবারের যুক্ত খাবার খেতে হবে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে ড্রাগন ফল ড্রাগন ফলের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা গর্ভবতী মহিলা ড্রাগন ফল খেলে সহজে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পাবে।

ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থের উৎসঃ গর্ভবতী মহিলার জন্য অন্যের খাদ্য পুষ্টি উপাদান এর পাশাপাশি ফ্যাট বা স্নেহ খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়। গর্ভের বাচ্চার মস্তিষ্ক বৃদ্ধি সমৃদ্ধ বা বিকাশের জন্য ফ্যাট প্রয়োজন হয়। 0.1 থেকে ০.৬ গ্রাম ফ্যাট থাকে অবশ্যই প্রয়োজন আর এর জন্য ড্রাগন ফল খেতে হবে।

ড্রাগন ফলের অপকারিতা

প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো খারাপ দিক রয়েছে। তেমনি ড্রাগন ফলের উপকারিতার সাথে কিছু অপকারিতা ও আছে। ড্রাগন ফলের কিছু ক্ষতিকর দিক নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি সে ক্ষতিকর দিক, 

অ্যালার্জির সমস্যাঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে কিছু মানুষদের মধ্যে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে শরীরের লালচে ভাব বা চুলকানি হতে পারে। তাছাড়া চোখ জ্বালাপোড়া হতে পারে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের ড্রাগন ফল পরিহার করা অবশ্যই অনিবার্য।

ডায়রিয়াঃ ড্রাগন ফলে উচ্চমাত্রায় ফাইবার রয়েছে। যা অতিরিক্ত ফাইবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর যার ফলে ডায়রিয়া আমোসা ও পেটে গ্যাস ও হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ড্রাগন ফল না খাওয়াই ভালো হবে।

ওষুধের সাথে বিক্রিয়াঃ ড্রাগন ফল কিছু ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে তাই নিয়মিত ওষুধ সেবন কারেদের ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে স্বাস্থ্য বিষয়ক ডক্টরদের সাথে পরামর্শ নিয়ে ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।

পুরুষত্বের সমস্যাঃ কিছু পুরুষের ড্রাগন ফল খাওয়ার পর সেক্সুয়াল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যা যৌন উত্তেজনায় সম্পৃক্ত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ফলে ড্রাগন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

পাচনতন্ত্রের সমস্যাঃ ড্রাগন ফল খেলে কিছু মানুষের পাচনতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হতে পারে, যা সাধারণত পেট ব্যথা, বমিশ্বর বা অতিসার এবং পাচনতন্ত্রিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

সুতরাং অতিরিক্ত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে শরীরের পুষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে যা শরীরের বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ড্রাগন ফল খাওয়া ঠিক হবে না

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে তা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। কারণ এতে আছে ক্যান্সারবিরোধী উপাদান। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে এই ফল। ড্রাগন ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। তাই এই ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে দ্রুত। এটি ক্যান্সার ছাড়াও আলঝাইমার্স, পারকিনসন, ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমায়।

উপসংহার

আমরা আজকে জেনে নিলাম ড্রাগন ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। তার সঙ্গে জানলাম গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত কি উচিত না। আরো জেনে নিলাম ড্রাগন ফলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ইত্যাদি। আশা করি আপনাদের কাছে আমাদের এই আর্টিকেলটি বোধগম্য হয়েছে।

যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানান এবং বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। আরো কিছু ভালো ভালো তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন। সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url