ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় - কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

কি কি খাবারে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে জেনে নিনসুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা,আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না আমাদের শরীরে কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, রক্তে ক্রিয়েটিনিন কত হলে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়,! মূলত এই প্রশ্নগুলো মানুষের মুখে মুখে। কেননা এখন বেশিরভাগ মানুষই কিডনির বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। তাই কমবেশি সকলেরই জেনে রাখা জরুরী।
ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়
যে কিডনির ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়। তবে আসুন আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানিয়ে দিব কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো, এবং কিডনির ক্রিয়েটিনিন কিভাবে কমানো যায় এবং আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সম্পর্কে যদি না জেনে থাকেন তাহলে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন

ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে                      

আমাদের দেহে কিডনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই কিডনিতে যদি আপনার সমস্যা দেখা দেয়। তাহলে আমাদের শরীরের ব্রর্জ গুলো কিডনির ভেতর তখন ফিল্টার করতে বাধা পায়। সে রক্ত কারণে ক্রিয়েটিনিন থেকে আলাদা হতে পারে না সে কারণে ক্রিয়েটিনিন মাত্রাটা বেড়ে যায়। ক্রিয়েটিনিন হচ্ছে মাংসপেশির ক্রিয়েটিন ফসফেট ভেঙে তৈরী হওয়া উৎপাদ। এটা শরীরে সর্বদা একটা নির্দিষ্ট অনুপাতে তৈরী হতে থাকে। তবে এটা পেশীর ভর বা ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। মানব শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না।

মূলত কিছু বিশেষ রোগ হলে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যেসব কিডনিতে পাথর হলে এবং প্রসবের নালীতে পাথর হলে রোগীর ক্রিয়েটিনিন মাত্রা বাড়ে যায়। আবার অন্যভাবে বলা যায় যে ,কিডনিতে কোন সমস্যা দেখা দিলে কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম করা বন্ধ করে দেয়। তখন অতিরিক্ত রক্ত কিডনি দিয়ে যখন অতিবাহিত হয় তখন রক্ত থেকে যায় এর ফলে ক্রিয়েটিনিন আলাদা হতে পারে না। যার ফলে এই ক্রিয়েটিনিন রক্তে থেকেই যায়। যার ফলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যয়।যায়।
নিচে কিছু ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে তার কিছু লক্ষণ উল্লেখ করা হলো
  • কিডনিতে পাথর হলে।
  • আপনার ঘুমের সমস্যা হয় যদি।
  • খাবারে প্রতি যদি অরুচি থাকে।
  • শরীরে ফোলা ফোলা ভাব হলে।
  • আপনার যদি বমি বমি ভাব আসে।
  • আপনার প্রসাবের যদি পরিবর্তন দেখা যায়।
প্রিয়ব পাঠক এতক্ষণ আপনারা জানলেন ক্রিয়েটিনিন কেন বাড়ে তবে নিচের পয়েন্টে এখন জানবেন কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডাইলেসিস করতে হয় তা বিস্তারিত জেনে আসি।

ক্রিয়েটিনিন কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়-কিডনির পয়েন্ট কত হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়

ক্রিয়েটিনিন হলো একটি বর্জ্য পদার্থ যা আমাদের শরীরের পেশী থেকে তৈরি হয়। চিকিৎসকদের মতে ক্রিয়েটিনিন সাধারনত ২.০ এর উপরে গেলে কিডনির কোষগুলো আস্তে আস্তে মারা যেতে শুরু করে। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর শরীরে শারীরিক পরিবর্তনের ফলে যে বর্জ্য পদার্থ তৈরী হয় তা শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ছাঁকনি হিসেবে কিডনি কাজ করে থাকে। কিডনি শরীরে প্রবাহিত সমস্ত রক্ত ছেকে পানির সাথে মিশিয়ে প্রসাবের মাধ্যমে শরীরের বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কত তা রক্তের মাধ্যমে কিডনির ফলাফল নির্দেশ করে।

সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৬ থেকে ১.৮ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL) এর মধ্যে থাকে। এই মাত্রাটি ২.৪ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হলে তা কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৭.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হলে তা কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই পর্যায়ে কিডনি রক্ত থেকে আর বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করতে পারে না। ফলে রোগীর জীবন রক্ষার জন্য ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। তবে, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৭.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হলেই অবশ্যই ডায়ালাইসিস করতে হবে।

অনেকেরই ভুল ধারণা আছে,যে একটা রোগীকে একবার ডায়ালাইসিস করানো হলে সেই রোগীকে আর বাঁচানো যায় না বা রোগী বাঁচে না তবে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানোর ফলে রোগী সুস্থ থাকে। তবে যারা অনিয়মিত ডায়ালাইসিস করেন, তাদের বিভিন্ন রকমের শারীরিক জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। যেমন- ক্ষুধামন্দা, রক্তস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া, মুখ চোখ এবং হাতে-পায়ে রস ধরা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ডাক্তাররা রোগির বয়স দেখে, রোগীর শারিরীক অবস্থা দেখে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৭ এর উপরে গেলেই ডায়ালাইসিস করতে বলেন। ডায়ালাইসিস করার সিদ্ধান্ত রোগীর অন্যান্য শারীরিক অবস্থা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বয়স এবং শরীরের ওজন অনুসারে পরিবর্তিত হয়। সাধারণত, ১ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ০.৪ থেকে ১.৪ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার, ১ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ০.৫ থেকে ১.৮ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে ০.৬ থেকে ১.৮ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এর মধ্যে থাকে।

সুতরাং, ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৭.০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার বা তার বেশি হলে তা কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কোন কারণে কিডনি নষ্ট হলে কিডনির পরিবর্তে কৃত্রিম ছাঁকনি ব্যবহার করে তার মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবাহিত সমস্ত রক্ত ছেঁকে শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় ডায়ালাইসিস এবং যে কৃত্রিম ছাঁকনি দিয়ে এ ছাঁকন প্রক্রিয়া করা হয় তাকে বলা হয় ডায়ালাইজার।

সর্বোপরি এ ব্যাপারে কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তবে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাবে এই রকম খাবার খাওয়া থেকে রোগীকে বিরত থাকতে হবে। এবং কিছু বিধি নিষেধ আছে সেগুলো মেনে চললে ক্রমাগত ক্রিয়েটিনিন বাড়ার গতিটা কমবে আশা করে যায়।

ক্রিয়েটিনিন কমানোর উপায়-কিডনির পয়েন্ট কমানোর উপায়

আপনারা অনেকে গুগলে সার্চ দিয়ে থাকেন কিডনির পয়েন্ট কমানোর উপায়। ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে তা আমাদে শরীরের জন্য এক বিপদজনক প্রভাব ফেলে। তাই সকল ডাক্তারগণই তার রোগীদের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানোর জন্য পরামর্শ দেন। তাহলে চলুন এখন আমরা জেনে নেই কিভাবে আমাদের শরিরের ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানো যাবে।
  • করলা খাওয়া।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
  • ক্যামোমাইল চা পান করুন
  • আঁশ যুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করুন।
  • হাইড্রেশনের মাত্রা বজায় রাখুন।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম করা বন্ধ করুন।
  • স্ট্রেন সৃষ্টিকারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন
  • অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ খাওয়া বন্ধ করুন।
  • প্রতিদিন এক টুকরো দারুচিনি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • প্রতিদিন ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়ামযুক্ত খাবার প্রতিদিন নিয়োমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে যেমন, গরুর মাংস, মহিষের মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি।
  • যারা ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট নিয়োমিত ব্যাবহার করছেন তারা ক্রিয়েটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যাবহার করা বন্ধ করুন।
  • NSAIDs এর অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: ওটিসি ওষুধ এবং নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAIDs)
  • অ্যাপল সিডার ভিনেগার প্রতিদিন পান করুন। তার জন্য এক গ্লাস গরম পানিতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে পান করুন।

ক্রিয়েটিনিন কমানোর ব্যায়াম

আমরা এই আর্টিকেল মাধ্যমিক ক্রিয়েটিনিন কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে জানতে পারব। সাধারণত শরীরকে সুস্থ রাখতে অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ব্যায়ামের কোন বিকল্প নাই যদি সুন্দর স্বাস্থ্য পেতে চান নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম করার ফলে মন ও স্বাস্থ্য দুটোই ভালো থাকে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি ব্যায়াম করলে ক্রিয়েটি নিন কমে যায়।

স্পিনিং স্পোর্টসঃ
এক্ষেত্রে কিডনি রোগী বা পেশেন্ট পুরোপুরি ফ্লাট ভাবে শুয়ে থাকবে এবং দুই হাতের কোনুর উপর ভর দিয়ে মাথাটা যতোটুক উপরে উঠানো সম্ভব তা উঠাবে এইব্যায়ামটি কিডনি রোগীদের জন্য খুব উপকারী।
 
সিটেট হাফ ফাইনাল টুইস্টঃ
এক্ষেত্রে পেশেন্ট দুই পা ক্রশ ভাবে রাখতে হবে এবং যে পা টা ক্রশ ভাবে থাকবে সেই পায়ের উপর সে হাত দিয়ে ধরে রাখতে হবে। এবং অপজিট হাত তার পিছনের দিকে থাকবে এভাবে এক থেকে দুই মিনিট করতে হবে. এবং একইভাবে রটেশন করে করতে হবে কিডনি রোগীকে।

কোবরা পোজঃ 
এক্ষেত্রে কিডনি রোগী পুরোপুরি ভাবে শুয়ে পড়বে পা দুটা ফ্লাট করে বুকের দুই পাশে দুই হাতে ভর দিয়ে কোমর থেকে নিচের অংশ উপর দিকে উঠে যাবে এবং মাথার অংশটা আকাশের দিকে মুখ করে থাকবে এভাবে ২০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত এই ব্যায়াম করতে হবে।

টু লেগ ফরওয়ার্ড ব্যান্ডঃ
পা দুটো সোজা থাকবে এবং হাত দুটা সামনের দিকে সজা করে পায়ের পাতা গুলো ধরে রাখতে হবে। এবং মাথাটা নিচের দিকে কিছুক্ষণ ঝুঁকে রাখতে হবে এ ব্যায়ামটি ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত করতে হবে।

ব্রিজ পোজঃ 
এক্ষেত্রে পেশেন্ট পুরোপুরি শুয়ে পড়বে এবং দুই পায়ের মাঝখানে ১০ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকবে এবং দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালি ধরে রাখবে। আমাদের শরীর পেট এবং বুক যত উপরে উঠানো যায় এভাবে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে।

বোট পোজঃ 
এ অবস্থায় আস্তে আস্তে পা দুটা উপরে উঠতে থাকবে যতটুক সম্ভব হবে এবং এর সাথে দুই হাত উপরে উঠবে একসঙ্গে এই ছিল কিডনি রোগীর ব্যায়াম।

সুতরাং হালকা দৌড়ানো বল খেলা জগিং ইয়োগা পুষ-আপ ইত্যাদি ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এর ফলে শরীরের সব জায়গাতে রক্ত চলাচল বাধা পায় না এবং সেইসাথে ক্রিটিনিন অর্থাৎ রক্তে ক্রিয়েটি নিন কমে যায়। যার ফলে কিডনি সুস্থ থাকে। আশা করছি উপরের এই ব্যায়াম গুলো পড়ে বুঝতে পেরেছেন কিডনি রোগের ক্রিয়েটি নেন কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে কিন্তু ক্রিয়েটিনিন কমানোর জন্য সবথেকে কার্যকরি উপায় হচ্চে যোগ ব্যায়াম। আপনি চাইলে ডাক্তারের পরামর্শকৃত ঔষধের সাথে যৌগ ব্যায়াম করতে পারেন। তাতে করে আপনি খুব দ্রুত সেরে উঠবেন।

ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

আমাদের শরীরের রক্তে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কিছু কিছু লক্ষণের দেখা দেয়। যেগুলি থেকে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাৎক্ষণিক আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে চলুন আমরা সকলেই জেনে নেই ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে কি কি লক্ষণের দেখা দিতে পারে।
  • চোখ ফুলে যায়।
  • ওজন কমে যায়।
  • প্রসাবে ফেনা হয়।
  • রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
  • খুব ক্লান্তি বোধ করে।
  • হার্টবিট খুব বেশি থাকে।
  • প্রস্রাবে দূর্গন্ধ হতে পারে।
  • বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  • হাত পা এবং মুখ ফুলে যায়।
  • খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না।
  • প্রসাবের জ্বালাপোড়া করে।
  • এমনকি ক্ষুধামন্দ তা দেখা দেয়।
  • প্রস্রাবে ব্যথা অনুভুত হতে পারে।
  • রাতে পোশাবের চাপ খুব বেশি হয়।
  • শরীরে এলার্জি বা চুলকানি দেখা দেয়।
  • আবার কখনো শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • হাত এবং পায়ের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • রোগীর জ্বর জ্বর ভাব হয় বা রাতে জ্বর আসে।
  • প্রসাবের লাল রং এবং পোশাকের সাথে রক্ত যায়।
  • এমনকি প্রসাদ করার পরেও মনে হয় প্রসব থেকে যায়।
  • ব্লাড প্রেসার উঠানামা করে কখনো বেশি হয় কখনো কম হয়।
  • কখনো কখনো রাতে খুব বেশি ঘামে এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • আমাদের শরীরের কোমরে পিছনে ডানে বামে উভয়পাশে ব্যথা হতে পারে।
প্রিয় পাঠক আশা করছি ক্রিয়েটি নিন বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন আপনাদের যদি এসব কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। তাহলে খুব দ্রুত আশেপাশে ভালো কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন তাহলে দ্রুত আপনার শরীরে ক্রিয়েটিনেন কমানোর ঔষধ বা যোগ্য ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকবে।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো

আমরা অনেকেই কিডনি রোগে ভুগে থাকে কিন্তু কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো তা অনেকেই আমরা জানি না। আমাদের কিডনির একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট আছে, এই পয়েন্ট এ যদি আমাদের কিডনি থাকে, তবে কিডনিকে আমরা সুস্থ বলতে পারি। কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় তা আপনার জন্য নিচে উল্লেখ করে দিয়েছি। চলুন, দেখে নেয়া যাক।

১। একজন স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৬-১.৬ মিলিগ্রাম হয়।
২। একজন স্বাভাবিক নারীর ক্ষেত্রে শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৫-১.২ মিলিগ্রাম হয়।
৩। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই কম হয়। একটি স্বাভাবিক শিশুর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে।
৪। কিশোরদের ক্ষেত্রে এই মাত্রটি শিশুদের থেকে একটু বেশি হয়। একটি স্বাভাবিক কিশোরের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা সাধারণত প্রতি ডেসিলিটারে ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে।
৫। আর যাদের একটা কিডনি নেই বা দান করে দিয়েছে এমন ব্যক্তিদের দেহে প্রতি ডেসিলিটারে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্রিয়েটিনিন থাকতে পারে।
৬। এছাড়া এটাও জেনে রাখুন যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ৫.০ mg/dL এর উর্ধ্বে গেলে তার কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
৭। *mg/dL ক্রিয়েটিনিন পরিমাপের একক। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে μmol/L এককটি ব্যবহার করা হয়। এক mg/dL প্রায় ৮৮.৪ μmol/L এর সমপরিমাণ।

উপরে উল্লিখিত তালিকায় থাকা পয়েন্ট এর থেকে আপনার শরীরের কিডনির যদি পয়েন্ট বেশি হয়, তবে বুঝে নিতে হবে যে কিডনিতে কোন সমস্যা হয়েছে। তখন আপনাকে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং চিকিৎসা করতে হবে। তবেই কিডনি রোগ ঠিক হবে। কিডনি রোগ যদি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে, তবে এই রোগ পুরোপুরিভাবে নিরাময় করা সম্ভব। আশাকরি কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয় এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।

ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে করণীয়

ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না। ক্রিয়েটিনিন কমানোর কোনো ওষুধ নাই। মূলত কিছু বিশেষ রোগ হলে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যেসব রোগের কারনে ক্রিয়েটিনিন বাড়ে সেসব রোগের চিকিৎসা করালেই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এজন্য ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গেলে আগে সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। যেমন:

১। ডায়াবেটিস থেকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি রোগ হয়। এতে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
২। ব্লাডপ্রেসার বা রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় না থাকলে কিডনি রোগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব্লাডপ্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩। কিডনিতে সংক্রমণের দরুন গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস রোগ হতে পারে। এই রোগের কারনে থেকে ক্রনিক কিডনি ডিজিস (CKD) হতে পারে। সেক্ষত্রে গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস রোগের চিকিৎসা করাতে হবে।
ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গেলে করণীয়:
উচ্চ ক্রিয়েটিনিন রোগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সাধারণ নির্দেশিকা:
  • সব ধরনের ফল দেয়া যাবে না।
  • কাঁচা জিনিস, সালাদ খাওয়া যাবে না।
  • সোডিয়াম,পটাশিয়াম খুব কম গ্রহণ করতে হবে।
  • কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণটা বাড়িয়ে দিতে হবে।
  • আনারস ৫০ গ্রাম অথবা ১ স্লাইস গ্রহণ করা যাবে।
  • প্রোটিন ৪০ গ্রাম গ্রহণ করা যেতে পারে এর বেশি না।
  • টমেটোর মাংসল অংশটা দেয়া যাবে কিন্তু তরল পানি অংশটা দেয়া যাবে না।
  • প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় কলা ও ডাবের পানি দেয়া বিরত থাকতে হবে।
  • পেঁপে একেবারেই দেয়া ঠিক না এতে ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
  • ক্রিয়েটিনিন মাত্রা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ৫-৭ গ্লাস এর বেশি পানি পান করা যাবে না।
  • খই কার্ব জাতীয় হওয়ায় এটি অসম্ভব ভালো কাজ করে। ভুট্টা, পপকর্ণ এগুলোও ভালো কাজ করে
  • আঁশ জাতীয় কিছু খাবার দেয়া যাবে না অর্থাৎ শাক,লালচাল,লালআটা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • যেসব খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে যেমনঃ গরুর দুধ, স্কিমড মিল্ক, দই, বেরি জাতীয় ফল, লাল আঙ্গুর, লাল ক্যাপসিকাম।
  • সবজি এর ক্ষেত্রে,সব ধরনের সবজিই খেতে পারবেন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই কিন্তু ভাপ দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে তারপর খেতে দিতে হবে।
  • যদি ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা অনেক বেশি থাকে তখন অবশ্যই চর্বি জাতীয় খাবার সীমিত গ্রহণ করতে হবে কিন্তু, PUFA (এক প্রকার ফ্যাটি এ্যসিড- আখরোট, সানফ্লাওয়ার তেল এ থাকে) হতে হবে।
  • মিষ্টি কুমড়ার শক্ত সবুজাভ অংশ, গাজরের মাঝের নরম অংশ, লবণাক্ত আচার, পনির, নুডলস মিক্স, পাস্তা, লবণাক্ত বা টিনজাত মাংস, খাবার সোডা, ক্যাফেইনযুক্ত খাবার থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
  • কোন প্রকার চা খাওয়া মোটেও ঠিক নয় এইক্ষেত্রে চা পান করার ফলে কিডনির কার্যকলাপ বেড়ে গিয়ে শরীরের প্রয়োজনীয় পানিও বেড়িয়ে যায়। এ কারণে একেবারেই এড়িয়ে চলা উত্তম।
প্রতিটি খাবারের বিকল্প খুঁজে বের করা প্রয়োজন। রোগীদের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে ডায়েট দিতে হবে, তবেই ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কমানো সম্ভব। যেসকল রোগী বা যাদের ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেশি তাদের অবশ্যই জীবনযাত্রার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের সামঞ্জস্যতা থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে পুষ্টিবিদ ও ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ গ্রহণ অবশ্যই জরুরী। উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন যে কিডনির পয়েন্ট বেড়ে গেলে কি কি রোগের চিকিৎসা করতে হবে এবং কি কি খাবার খাওয়াতে হবে কি পরিমানে এবং কি কি খাওয়াবেন না।

ক্রিয়েটিনিন কমানোর হোমিও ঔষধ

একুশ শতকের পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে হোমিও চিকিৎসাও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। উন্নত হয়েছে হোমিও ওষুধের গুণগতমান। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগ করলে হোমিও চিকিৎসায় দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। এজন্য। এ বিষয়ে একজন বিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন।

হোমিওপ্যাথিতে কিডনীর বিভিন্ন রোগ বা সমস্যার জন্য অনেক মেডিসিন আছে। যেমন, লাইকোপোডিয়াম, বার্বারিস ভালগারিস, লিথিয়াম কার্ব, সার্সাপেরিলা, থ্যালাপসি- বার্সা, এপিজিয়া, ক্যানথারিস ও ক্যালকেরিয়া সহ অনেক মেডিসিন লক্ষনের উপর আসতে পারে তাই বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক ছাড়া নিজে নিজে মেডিসিন ব্যবহার করলে রোগ আরো জটিল আকার পৌছতে পারে।

সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষার খরচ

কিডনী পরীক্ষার খরচ বিভিন্ন দেশ এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে এবং আরও কিছু ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন করতে পারে। পরীক্ষার ধরণ, অবস্থান, পরীক্ষার কর্মীর মূল্য এবং অন্যান্য পরিবেশনার উপর নির্ভর করে খরচের পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারে। সাধারণত বাংলাদেশে, কিডনী পরীক্ষার খরচ ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। কিছু স্পেশালাইজড পরীক্ষার যেমন বিপিএল স্ক্যান (Biposy) বা ম্রিয়ার খরচ বেশী হতে পারে। একটি কিডনী পরীক্ষা করতে যদি আপনার প্রয়োজন হয়, তাহলে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আপনি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে পরীক্ষার মূল্যের সম্ভাব্য খরচ জানে নিতে পারেন। তারা আপনাকে খরচের সম্ভাব্য পরিমাণ বলে দিতে পারবেন।

শেষ কথা

এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি ক্রিয়েটিনিন কমানোর বিভিন্ন উপায় এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কোন ব্যক্তির কিডনির কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিন। মনে রাখবেন সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ একজন মানুষের জীবন বাছিয়ে দিতে পারে। আশা করছি বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনারা শরীরের একটি অন্যতম অঙ্গ কিডনি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং কিডনির সমস্যা হলে কি করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

রক্তে কত মাত্রা ক্রিয়েটিনিন হলে ডায়ালাইসিস করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার পর যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সর্বশেষ সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর আপনার মতামত জানাতে নিচে কমেন্ট বক্স রয়েছে তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url