ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা - ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি

রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহারআসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো জানতে চেয়েছেন ডুমুর ফলের উপকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে। আমরা অনেকেই চিনি ডুমুর ফল বিশেষ করে গ্রামে গঞ্জে অযত্নে ভিজা জায়গায় এই ডুমুর গাছ দেখা যায় আমরা অনেকেই জানিনা ডুমুর ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন আজকে এই আর্টিকেলে ডুমুর ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সম্পর্কে জেনে আসি।
ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনারা যদি ডুমুর ফল ও তিন ফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে আপনারা ডুমুর ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা ও ডুমুর ফল কিভাবে রান্না করতে হয় এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে পারবেন। তবে চলুন দেরি না করে বিস্তারিত জেনে নিন,

ডুমুর কি জাতীয় ফল

বর্তমানে বাংলাদেশে ডুমুর ফলের নাম জানেনা এরকম মানুষ খুব কম রয়েছে। কিন্তু ডুমুর কি জাতীয় ফল তা অনেকেই জানেনা চলুন তা জানিয়ে দিয়। ডুমুর ফল হল একটি উচ্চ গুণ সমৃদ্ধ ভেষজ উদ্ভিদ। ডুমুর এটি খুব নরম ও মিষ্টি জাতের ফল। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো চাটনি হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও, স্ন্যাকজাতীয় খাবারেও ডুমুরের প্রয়োগ হয়ে থাকে। ডুমুর ফল নামে পরিচিত হলেও এটি সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়।

ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি

ডুমুর ফল এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল। এ ফলটি কাঁচা, পাকা এমনকি আপনিও খেতে পারবেন। ডুমুর ফলকে যে শুধু ফল হিসেবে খাওয়া যায় এমনটি নয়। ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে মানুষ এটিকে বিভিন্নভাবে রান্না করে খায়। অনেক মানুষ ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি জেনে বিভিন্নভাবে রান্না করে খেয়ে থাকেন। ডুমুর রান্না করার পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-
  • ডুমুর ভাজি করে খাওয়া যায়।
  • ডুমুরের ভর্তা খাওয়া যায়।
  • ডুমুর কোপ্তা খাওয়া যায়।
  • ডুমুরের লাড্ডু তৈরি করা যায়।
  • ডুমুরের নাগেটস তৈরি করা যায়।
  • ডুমুর দিয়ে চিংড়ি মাছ রান্না করা যায়।
  • আলু ও ডুমুর দিয়ে সবজি রান্না করা যায়।
  • পান পাতার সঙ্গে ডুমুর ফল খেলে এর ভেষজ গুণ বেশি পাওয়া যায়।
  • ডুমুর ফল রান্নার পদ্ধতি জেনে আপনিও খাদ্য তালিকায় এই ফলটি যুক্ত করতে পারেন।
এই ছাড়াও ডুমুর আরো অনেক পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়া যায়। আর এসব রেসিপি অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।

ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম

আপনারা অনেকেই ডুমুর ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানেন না আর সঠিক নিয়ম না জানার কারণে অনেকেই ডুমুর ফল খাওয়ার পরেও সঠিক গুনাগুন থেকে আপনারা বঞ্চিত থাকেন। তাই আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দেব ডুমুর ফল খাওয়ার বেশ কিছু সহজ নিয়ম। এই নিয়ম অনুসারে আপনি যদি এই ফলটি খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের জন্য বেশ উপকার মিলবে। চলুন তাহলে দেরি না করে জেনে নেয়া যাক ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে।
  • কাঁচা ডুমুর চিবিয়ে খাওয়া যায়
  • পাকা অবস্থায় ডুমুর খাওয়া যায়।
  • ডুমুর কেটে সালাত করে খাওয়া যায়।
  • ডুমুরের প্রতিটি অংশই খাদ্য উপযোগী।
  • ডুমুরের সাথে মধু মিশ্রণ করে খাওয়া যায়।
  • ডুমুর দ্বারা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তৈরি করা যায়।
  • ডুমুর ফল কাঁচা অবস্থায় রান্না করে খাওয়া যায়।
  • ডুমুরের সাথে নানা ধরনের সবজি মিশিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।
  • আমরা অনেকেই অনেক রোগ দূর করার জন্য ডুমুর খাই। তাই আমাশার জন্য যদি আপনি কাঁচা ডুমুর চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে অতি দ্রুত আমাশার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
  • তাছাড়া মেয়েদের মাসিক অবস্থায় অতিরিক্ত মাত্রায় সাদাস্রাব হলে ডুমুরের সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত কাজ করে। তবে নিয়ম অনুসারে খেতে হবে।
এক কথায় বলতে গেলে ডুমুর ফল খাওয়ার ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই। কারণ এটি এমন একটি কার্যকরী উদ্ভিদ যা সবজি,ফল এবং ঔষধি হিসেবে গ্রহণ করা যায় ।

ডুমুর ফল এর উপকারিতা

ডুমুর ফলটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন এতে থাকা বিদ্যমান পুষ্টিগুণগুলো শরীরের বিভিন্ন ধরনের সাহায্য করে থাকে। ডুমুর ফল এর উপকারিতা বলে শেষ করার মত নয়। ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। মেয়েদের বিশেষ সমস্যা থেকে শুরু করে পুরুষদের যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এই ফলটির ভূমিকা অন্যতম। ডুমুর ফল খেলে কি কি উপকারিতা পেতে পারেন তা নিম্নে উল্লেখ করা হল--
  • উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে করে।
  • হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে।
  • স্নায়বিক দুর্বলতা প্রতিরোধে।
  • মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করতে।
  • গুটি বসন্ত রোগ প্রতিরোধে।
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন ঠিক রাখে।
  • হৃদ রোগের প্রতিরোধক হিসেবে।
  • ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • ডুমুর পিত্ত ও আমাশয় রোগে উপকারী।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্নে এর ভূমিকা অনেক বেশি।
  • ফোড়া বা অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি রোধে।
  • কিডনি এবং মূত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায়।
  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ডুমুর ফল গুরুত্বপূর্ণ।
  • দুধ ও চিনির সঙ্গে ডুমুরের রস খেলেও অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়।
  • প্রতিদিন ডুমুর সেবন কারলে শুক্রানু বৃদ্ধি ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • মাথা ঘোরা রোগে ডুমুর ভাজি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
  • ডুমুর গাছের ছাল পানি সহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধৌত করলে চর্মের বিবর্ণতা এবং ক্ষত রোগে উপকার হয়।
আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন ডুমুর ফল এর উপকারিতা কত রকমের হতে পারে। তাই আপনি চাইলে আপনার খাদ্য তালিকায় ডুমুর ফল যুক্ত করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীর-স্বাস্থ্য উভয় ভালো থাকবে।

ডুমুর ফলের অপকারিতা

প্রতিটি জিনিসের যেরকম উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমন অপকারিতা ও রয়েছে। ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই বিদ্যমান। ডুমুর ফলের অপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো-
  • ডুমুর বেশি খেলে অন্ত্র ও পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে ডুমুর খেলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • অধিক পরিমাণ ডুমুর খেলে নাক দিয়ে অনেক সময় রক্ত বের হয়।
  • যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে ডুমুরের আঠা তাদের জন্য ক্ষতিকর।
  • ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, তাই বেশি খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
  • মাত্র অতিরিক্ত ডুমুর খেলে রক্ত ঘন থেকে পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
  • কিছু লোকের ডুমুর খেতে অ্যালার্জি হতে পারে, তাই এটি খাওয়ার আগে একবার আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন।
  • ডুমুর যেমন ওজন কমাতে সহায়তা করে। ঠিক তেমনি বেশি পরিমাণে খেলে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ওজন বৃদ্ধি করে।
  • ডুমুর এক ধরনের প্রাকৃতিক চিনি হিসেবে কাজ করে। এটি বেশি খাওয়া হলে দাঁত পচে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদেরও এটি খাওয়ার আগে একবার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করা উচিত
  • ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে তারপর সেবন করা উচিত।

ত্বীন ফল কি ডুমুর

ত্বীন ফল

ত্বীন ফল একটি পুষ্টিকর ফল। তিন ফল ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Fig। ত্বীন ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Ficus carica। এই ফলটি দেখতে অনেকটা দেশীয় ডুমুরের মত। কিন্তু তুলনামূলক দেশি ডুমুরের চেয়ে আকারে একটু বড় হয়ে থাকে। এটি সুমিষ্ট এবং অত্যধিক সুস্বাদু এবং রসালো একটি ফল। এককথায় স্বাদে-গন্ধে পুষ্টিগুণে সেরা একটি ফল হল ত্বীন ফল। বাংলাদেশে বহুল পরিচিত বিদেশী ফল গুলোর মধ্যে তিন ফল দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। সৌদি আরবে এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত।

বিশ্বের অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ করা হচ্ছে। এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে অর্থকরী ফসল হিসেবে উৎপাদন করা হয় ত্বীন ফল। ত্বীন ফল সবচেয়ে বেশি চাষ হয় তুরস্কে। বর্তমান বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফল চাষ করা হচ্ছে ও এতে সফলতাও লাভ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের ফল হওয়ায় আমাদের অনেকের কাছেই এই ফল খুব একটা পরিচিত নয়। তুরস্কে এই ফল খুব ভাল জন্মে, বর্তমানে বাংলাদেশের বগুড়া এবং গাজীপুরে এর চাষ হচ্ছে।

ত্বীন ফল নিয়ে হাদিস

পবিত্র কোরানে ত্বীন নামে একটি সূরা রয়েছে যেখানে আল্লাহ তায়ালা ত্বীন ফলের নামে শপথ করেছেন। আবার এটাও স্পষ্ট যে, যখন আদম ও মাতা হাওয়া আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ঘ্রাণ খেয়ে উলঙ্গ হয়ে গেলেন, তখন তারা ত্বীন ফলের পাতা দিয়ে তাদের লজ্জাস্থান দূর করেছিলেন। ত্বীন বৃক্ষটিও জান্নাতে রয়েছে, অর্থাৎ ত্বীন একটি জান্নাতি ফল।

তিন ফল বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায়

প্রিয় পাঠক আপনারা হয়তো জানতে চেয়েছেন তিন ফল বাংলাদেশের কোথায় পাওয়া যায়। তাই আপনাদের এই প্রশ্নের ও সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া হবে। পবিত্র কুরআনের সূরা আত তীন এ উল্লেখিত তিন ফল এখন বাংলাদেশের গাজীপুর ও বগুড়া জেলায় চাষ হচ্ছে । সেখানে এই তিন ফল বিক্রি হওয়ার পাশাপাশি এই তিন ফলের চারা ও প্রতিনিয়ত বিক্রি করা হচ্ছে আপনারা চাইলে এই গাজীপুর জেলা থেকে তিন ফল সংগ্রহ করতে পারেন।

শেষ কথাঃ ডুমুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

সম্মিলিত বন্ধুরা আপনারা হয়তো ওপরের পোস্টটি পড়ে এতক্ষণ জানতে পেরেছেন ডুমুর ও তিন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আপনাদের যদি এ পোস্টটি পড়ে কোন উপকৃত হন তাহলে বন্ধুদের কাছে পোস্টটি শেয়ার করবেন এবং এই পোস্ট সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে নিচে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিতে পারেন। এমনকি আরও গুরুত্বপূর্ণ লাইফস্টাইল চিকিৎসা সেবা ইসলামিক পোস্ট পড়তে এ ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url