চিনা বাদাম খাওয়ার ১১টি উপকারিতা - চীনা বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা

ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতাপ্রিয় পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন, চীনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে বন্ধু আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। কারণ আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাকে এখন জানাবো চিনা বাদাম খাওয়ার ১১টি উপকারিতা সম্পর্কে। কাচা বাদামে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি গুন যা আমাদের শরীরে জন্য বেশ উপকারী। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই কাঁচা ও চীনা বাদাম খাওয়ার উচিত।
চিনা বাদাম খাওয়ার ১১টি উপকারিতা

শুধু তাই নয়, চিনা বাদাম বিষয়ক আরো অন্যান্য অজানা তথ্যগুলো আপনারা জানতে পারবেন এই পোস্টের মাধ্যমে। কেননা আমরা চিনা বাদাম নিয়ে খুবই সুন্দরভাবে এই পোস্টটি সাজিয়েছি এবং আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তাই আপনি এই পোস্টটি অবশ্যই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আশা করি এ পোস্টটি পড়তে আপনার অনেক ভালো লাগবে এবং এ পোস্টটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।

ভূমিকা

চীনাবাদাম (আরাচিস হাইপোগিয়া-Arachis hypogea) লেগাম গোত্রের একটি প্রজাতি যার উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো। আদি উৎস আমেরিকা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্য আফ্রিকা, মাদাগাস্কারসহ আরো অনেক উষ্ণমন্ডলীয় দেশে চীনাবাদামের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। চীনাবাদাম হচ্ছে সয়াবিনের পর সর্বাপেক্ষা বেশি তেল প্রদায়ী ফসল। চীনাবাদামের গাছ একটি ঔষধী জাতীয় লতানো গুল্ম, যা ৩০ সেমি থেকে ৫০সেমি (১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট) দীর্ঘ হয়।
চীনা বাদামের ফুল থেকে স্বাভাবিক ভাবে অন্যান্য ফুলের মতই ফল হয় না। এদের গাছে হলুদ রং এর ফুল হয়। সেই ফুলে পরাগয়ান হবার পর ফুলের পাপড়িগুলি ঝরে যায় ও ওভারীটি ফুলে ওঠে। সেই ফুলে ওঠা ডিম্বাশয়কে পেগ (peg) বলা হয়। সেই পেগটি তখন আরো একটি লম্বা হয়ে ওঠা একটি দন্ড সহকারে হটাত নিচের দিকে ঘুরে যায়। সেই ডিম্বাশয়টি পেগ-স্টেম সহ তখন নিচে ঘুরে গিয়ে এক /দু দিনের মধ্যে মাটির নিচে প্রবেশ করে ও ধীরে ধীরে চিনাবাদাম ফল হয়ে মাটির নিচেই বাড়তে থাকে। তাই আমরা যখন চীন বাদাম এর ফল তুলি তখন মাটির নিচ থেকেই তুলতে হয় যদিও ফুল মাটির ওপরে স্বাভাবিক ভাবেই হয়।

চিনা বাদাম খাওয়ার ১১টি উপকারিতা 

চিনা বাদাম বেশ সহজলভ্য এবং উপকারী। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা মেলে চিনা বাদাম বিক্রেতার কাছে। শখ করে কখনো কখনো হয়তো খাওয়া হয় তবে এর উপকারিতা সম্পর্কে জানলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই বাদাম রাখতে চাইবেন। চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্বো-হাইড্রেট ও প্রোটিন আছে। প্রতিদিন একমুঠো চিনা বাদাম খেলে আপনি আপনার শরীরকে অনেক রোগ-বালাই থেকে দূরে রাখতে পারবেন। চলুন তা জেনে নেওয়া যাক

1.স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ 
খুব অল্প বয়সে অনেকেই মস্তিষ্কের সমস্যায় থাকেন অনেক সময় সামান্য বিষয় অনেক চেষ্টা করেও মনে রাখতে পারছেন না এমনটা হয় যখন মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক খাদ্যের আর চিনা বাদাম কে বলা হয় মস্তিষ্কের খাবার চিনা বাদামে রয়েছে ভিটামিন বি৩ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে তাই প্রতিদিন চিনাবাদাম খাওয়া উচিত যাতে মস্তিষ্ক স্বয়ক্রিয় ভাবে কাজ করে থাকা।

2.কোলেস্টেরল কমায়: 
কোলেস্টেরলের শরীরে সাধারণ একটি সমস্যা কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি চিনা বাদাম খেতে পারেন। কেননা এর মধ্যে রয়েছে কপার, বায়োটিন প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন, সালফার, ফসফরাস, নিয়াস ও ম্যাগনেসিয়াম যা কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে যার ফলে হৃৎপিণ্ড ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

3.শরীরের কোষ গঠনঃ
শরীরে কোষ গঠন ও মেরামতের জন্য কার্যকারী উপাদান হচ্ছে চিনা বাদাম চিনা বাদাম হল উদ্ভিদ প্রোটিন তাছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। যার ফলে কোষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষ গঠনে সহায়তা করে।

4. ওজন কমাতেঃ 
ওজন কমাতে চীনা বাদাম খাওয়া অনেক কার্যকারি চিনা বাদাম কিছু দিন খাওয়ার পর দেখবেন আপনার অনেকটা ওজন কমে যাচ্ছে ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে পারে না তাছাড়া বাদামে ভালো ফ্যাট পাওয়া যায় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

5.ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ 
একজন ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। কেননা চীনা বাদামে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় চীনাবাদাম রাখা অবশ্যই উচিত।

6.ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ 
চিনা বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই উপাদান অন্য রোগকেও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ফলে আমরা বলতে পারি চিনা বাদাম একটি ক্যান্সারের মহা ওষুধ হিসাবে কাজ করে।

7.হার্টের সুস্থতায়ঃ 
চিনা বাদাম হাটকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে কারণ চীনা বাদামে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট নামক উপাদান পাওয়া যায়। তাছাড়া ওলিক অ্যাসিডিও পাওয়া যায় যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

8.পুষ্টির ঘাটতি পূরণঃ
চিনা বাদাম খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব দূর হয় কেননা এতে রয়েছে ফাইবার প্রোটিন ভিটামিন ফ্যাট ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম যা শরীরকে পুষ্টি এর ঘাটতি পূরণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

9.হাড়ের উন্নতি সাধনঃ 
চিনা বাদামে ফসফরাস পাওয়া যায় যা শরীরের প্রবেশ করে ক্রিয়ার মাধ্যমে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে যার ফলে হাড়ের রোগের আশঙ্কা কমে যায়।

10.রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ 
 চিনা বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যা আমাদের শরীরে কোন রোগকে বাসা বাঁধতে দেয় না।

11.ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ
চিনা বাদাম খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় বাদামে থাকা ভিটামিন ই এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ত্বকের ময়লা  দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

চিনাবাদাম খাওয়ার অপকারিতা

চিনাবাদাম শরীরের জন্য একটি উপকারী উপাদান তবে এর কিছু ক্ষতিকর দিকও পাওয়া যায়। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। চলুন তাকেই সমস্যা জেনে নেওয়া যাক;

1.অ্যালার্জির সমস্যাঃ বাদামে একটি অ্যালার্জি ফুড যা শরীরের অ্যালার্জির সৃষ্টি করে। তাই চিনা বাদাম খেলে শরীরে এলার্জির হওয়টা স্বাভাবিক একটি বিষয় এর লক্ষণগুলো হল শরীর চুলকানো শ্বাসকষ্ট বমি বমি ভাব মাথা ঘোরা শরীর ফুলে যাওয়া। তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের চীনা বাদাম পরিহার করা উচিত হবে।
2.ওজন বৃদ্ধিঃ বাদাম একটি উচ্চক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত চিনা বাদাম খেলে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ক্যালরি যোগ হতে পারে যার ফলে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
3.উচ্চ রক্তচাপঃ বাদামে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব কম যার ফলে আমরা লবণ দিয়ে বাদাম খেয়ে থাকি। এতে রক্তের লবণের পরিমাণ বেড়ে যায় অতিরিক্ত সইডিয়াম রক্ত প্রবাহ থেকে পানি ও ফ্লরিড শোষণ করে নেয়। ফলে দেখা যায় উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে।
4.ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যায়ঃ বাদামে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম উপাদান রয়েছে যা ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যায়।
5.প্রদাহ সৃষ্টিঃ বাদামে ওমো-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় কিন্তু ওমেগা-৩ পাওয়া যায় না। আর ওমেগা-৬  ওমেগা-৩ এর ভারসাম্য ঠিক না থাকলে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
6, যাদের কিডনি ও গলব্লাডারের সমস্যা রয়েছে তাদের কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এতে বিদ্যমান অক্সালেট ক্যালসিয়াম কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
7.পয়জনিংঃ কাঁচা বাদাম ভালোভাবে সংরক্ষণ না করলে এতে এক ধরনের ছত্রাক এর সংক্রমণ হতে পারে এটি খেলে শরীরে প্রবেশ করে একটি বিষাক্ত উপাদান যা "Afiatoxin,তৈরি করেন এ উপাদানটি লিভারের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই ছত্রাকের প্রতিরোধে কাঁচা বাদাম অবশ্যই শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।

চিনাবাদাম কতটুক খাওয়া উচিত এবং সঠিক নিয়ম

নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে শরীরে নানা পুষ্টি গুণ উপাদান প্রবেশ করে কিন্তু সঠিক পরিমাণ খাওয়ার নিয়ম না জানলে উপকারের পরিবর্তে হতে পারে ক্ষতি। তবে চলুন আমরা নিত্য প্রতিদিন কিভাবে চিনা বাদাম খাবো তা সঠিক নিয়ম জেনে নেই।
  • খালি পেটে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • দিনে ৪২ গ্রাম বাদাম খাওয়া উচিত।
  • সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন বাদাম খাওয়া উচিত।
  • পানিতে ভিজিয়ে খাবেন এতে বাদাম ভালোভাবে হজম হবে।
  • বাদাম সিদ্ধ করে খেলে শরীরে কোলেস্টেরল পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে।

শেষ কথাঃ

প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি এতক্ষণে আপনি জেনে গেছেন চীনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। যেহেতু চিনা বাদামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে সেহেতু আমাদের সকলেরই উচিত খাদ্যের তালিকায় চিনা বাদাম রাখার। নিশ্চয়ই পোস্টটি আপনার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এবং অনেক উপকারে আসবে।
তাই এ পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। তাহলে আপনার মাধ্যমে আপনার বন্ধুরা জানতে পারবে চীনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আর অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিট বা ফোলো করা চেষ্টা করবেন, কারণ আমরা নিয়মিত এই ওয়েবসাইটে নতুন নতুন ব্লগ পোস্ট বা আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url