আলসার কেন হয় ও এর প্রতিকার

কাশির জন্য মোনাস ১০সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আশা করি অনেক ভালো আছেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলটি হলো আলসার কেন হয়? আলসারের লক্ষ্মণ এবং আলসার হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে এবং কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা সে বিষয়ে। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানব।

আলসার কেন হয় ও এর প্রতিকার

আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়লে আপনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো চলুন আপনাদের মহামূল্যবান সময়ের দিকে নজর দিয়ে আজকের বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। 

আলসার কি

আলসার হলো একটি অভ্যন্তরীণ রোগ যা পাকস্থলীতে হয়ে থাকে। সাধারণ অর্থে আলসার শব্দের অর্থ ক্ষত যা পরিপাকতন্ত্রে অতিমাত্রায় এসিডের কারণে হয়ে থাকে। এসিড ব্যতীত অন্য কারণেও আলসার হতে পারে। আলসার থেকে ক্যান্সারও হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেননা আলসার হয় একধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে আর এই ব্যাকটেরিয়া ক্রমেই পরিপাকতন্ত্রের ক্ষত করে এমনকি অনেক সময় ক্যান্সারও হতে পারে। এই ক্যান্সারের কয়েকটি ধরণ রয়েছে। 

স্ট্রমাকে অ্যাসিড প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উৎপন্ন হলে এই রোগ অর্থাৎ আলসার হয়। আবার এসিডের মাত্রা ঠিক থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ হয়ে থাকে।সাধারণত খাদ্যথলির প্রথম ভাগে আলসার পরিলক্ষিত হয়। তবে এই রোগকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ(i)গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং (ii) ডিওডিনাম আলস্যার। খাদ্যথলির অভ্যন্তরে যে আলসার হয় তাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে। খাদ্য থলির প্রথম অংশে যে আলসার হয়, তাকে ডিওডিনাম আলসার বলে। দুটির প্রভাবেই মানব দেহের প্রতি সাধন হয়। আনসার একটি কষ্টদায়ক রোগ।

আলসার এর লক্ষণ

আমরা সকলে কমবেশি জানি যে আমরা দৈনন্দিন যে সকল খাবার গ্রহণ করি তার সবই পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হজম ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। পরিপাকতন্ত্রের ক্ষত বা আলসার হলে রোগী প্রচন্ড কষ্ট পায়। আলসার একটি কষ্টদায়ক রোগ, অল্পতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে এ থেকে জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানা যায়। আলসারের প্রাথমিক পর্যায়ে কি কি উপসর্গ পরিলক্ষিত হয় সে সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করা হলো– পেটের উপরিভাগে ব্যথা হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, প্রায়ই বমি করা, ওয়াশরুম ব্যবহারের সময় রক্ত পড়া, খাবার খেলে অধিকাংশ সময় বুক জ্বালাপোড়া করা, পেট স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি ফাঁপা থাকা,ক্ষুধা মন্দা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগাসহ অস্বাভাবিক ঢেকুর ওঠা ইত্যাদি।

আলসার হলে প্রাথমিকভাবে বোঝার উপায় হলো পেটের উপরে ভাগ স্বাভাবিকের থেকে বেশি ফাঁপা দেখাবে, এছাড়া অনেক সময় বমি বমি ভাব হবে এবং সেই সাথে বমিও হতে পারে। বমি হওয়া মজার কোন বিষয় নয়, বমি হলে স্ট্রমাকে আঘাত অনুভূত হয়। অনেক সময় আনসারের উপসর্গ হিসেবে মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হয়ে থাকে। ক্ষুধামন্দা বা খেতে ইচ্ছা না করা এটিও আলসারের একটি লক্ষণ। সেই সাথে আরো একটি বিশেষ বিষয় পরিলক্ষিত হয় সেটি হল অস্বাভাবিক ঢেকুর ওঠা।

উপরের আলোচিত বিষয় গুলো অনেক সময় আমরা স্বাভাবিক হিসেবে ধরে থাকি। আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করি ঢেকুর ওঠা,পেট ফাঁপা থাকা, বুক জ্বালাপোড়া করা এবং পেট ফুলে থাকা এগুলো মনে হয় গ্যাস্ট্রিকের কারণ। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে এগুলো আলসারের উপসর্গও হতে পারে। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে নিশ্চিত হওয়াটাকেই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করি।

যদি প্রায়ই এগুলো হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এটিকে গ্যাস্ট্রিক বলে বিবেচনা না করে অতিদ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেওয়া একান্ত জরুরী। এ সকল বিষয় নিয়ে অবহেলা না করাই উচিত, কেননা এ থেকে ক্যান্সারের উৎপত্তি হতে পারে। এজন্য আবারও বলছি উপসর্গগুলো দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। 

আলসার কেন হয়

পেটের আলসার এক যন্ত্রণাদায়ক অসুখ। এটি হওয়ার মূল কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এটির চিকিৎসা না করা হয় তাহলে রোগীর পরবর্তীতে মারাত্মক ঝকির সম্মুখীন হতে পারে। আলসার আক্রান্ত রোগীকে অনেক জ্বালা সহ্য করতে হয়। এ কারণে চিকিৎসকগণ এ রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পরামর্শ দেন। অনেকে এ রোগের সঠিক চিকিৎসা সম্পর্কে উদাসীন। যার কারণে পেপটিক আলসারের কারণে স্টমাক বা পাকস্থলী ফুটো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। আলসার হওয়ার কারণ কিন্তু ব্যাকটেরিয়া। হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে মানুষ আলসারে আক্রান্ত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া ছোঁয়াছে ফলে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হয়। 

অনেক সময় অনেকে ব্যথা নিরাময় করার জন্য বিভিন্ন পেইন কিলার সেবন করে থাকেন যা পরিপাকতন্ত্রের আরো ক্ষতির কারণ। এ কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে। উপরের কারণগুলো ছাড়া আরো বেশ কিছু কারণের জন্যও আলসার হয়ে থাকে। যেমনঃ নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এবং ভাজা পোড়া মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত টেনশনসহ ধূমপানের মতো বদ অভ্যাস নিয়মিত চলতে থাকলে আলসার হয়ে থাকে। যদি উপরের বিষয়গুলো থেকে নিজেকে সংযত রাখা যায় সে ক্ষেত্রে অনেকাংশে আলসারের ঝুঁকি কম থাকে। 

আলসার থেকে মুক্তির উপায়

প্রথমেই জেনেছি আলসার একটি অভ্যন্তরীণ রোগ।সেই সাথে আরো জেনেছি এটি একটি যন্ত্রণাদায়ক রোগ থেকে বাঁচতে হলে মদ্যপান,ধূমপান, অতিরিক্ত মশলা জাতীয় খাদ্য বর্জন করাসহ সকল প্রকার পেইন কিলার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা। 

আলসার হলে কি খাওয়া ঠিক না / উচিত নয়

আলসার আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে যে সকল খাবার খাওয়া উচিত নয় সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো– ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া, লাল মাংস না খাওয়া, অ্যালকোহল বা নেশা জাত দ্রব্য গ্রহণ না করা, অতিরিক্ত ঝাল বা তৈলাক্ত খাবার না খাওয়া, ননী বা মাখন জাতীয় খাবার না খাওয়া ইত্যাদি।পাকস্থলীর আলসার কে পেপটিক আলসারও বলা হয়। পেকটিক আলসার হলে কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। শুধু কফিই নয় ক্যাফেইন সমৃদ্ধ সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

লাল মাংস বলতে গরু বা খাসি ইত্যাদির মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এ মাংস খেলে আলসার বৃদ্ধি পেতে পারে। আর এ কারণেই চিকিৎসকগণ রোগীকে লাল মাংস খেতে নীরউৎসাহিত করেন। লাল মাংস প্রোটিনের উৎস। এতে উচ্চ চর্বি থাকাই এটি আলসারের বৃদ্ধি ঘটায়। এছাড়া এ সকল মাংস মোটা হওয়ায় রেচন ক্রিয়ায় অধিক এসিডের প্রয়োজন হয় যার ফলে আলসার বৃদ্ধি পায। ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবারে আলসারের প্রবণতা বেশি থাকে।

আরে এ কারণে ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করা অতীব জরুরি। মাখন বা ননি জাতীয় খাবারে প্রচুর চর্বি থাকে। এছাড়া ক্রিম,পনির,বাটার ইত্যাদি খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে চর্বি যা পেপটিক আলসার কে আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই উপরের খাবারগুলো আলসারের রোগীকে খেতে না দিয়ে নরমাল খাবার দিতে হবে যেগুলো সহজে হজম যোগ্য। আরেকটি কথা না বললেই নয় আনসার এর লক্ষণ গুলো পরিলক্ষিত হওয়ার সাথে সাথে নিকটস্থ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন, এবং যেকোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ এবং নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করবেন।

 শেষ কথাঃ আলসার কেন হয় ও এর প্রতিকার 

উপরে আলসার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আনসার একটি যন্ত্রণাদায়ক রোগ এবং অভ্যন্তরীণ রোগ এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা থেকে একটি বিষয় অনেক পরিষ্কার হয়েছে যে আলসার কি পরিমাণ মানবদেহের ক্ষতি করতে পারে, মানবদেহে আলসারের লক্ষণ কিভাবে পরিলক্ষিত হয়,আলসার নিরাময়ের উপায়, আলসার হলে কি কি খাবার বর্জন করতে হয় ইত্যাদি বিশেষ সম্পর্কে বিশ্লেষণ পূর্বক আলোচনার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। 

প্রিয় পাঠক আশা করছি উপরের বিষয়বস্তু পঠন পাঠন এর মাধ্যমে আপনার কাঙ্খিত বিষয়টি ভালোভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটি মন দিয়ে এবং সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকে আর্টিকেলটি শেষ করছি ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url