থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা - থানকুনি পাতা চেনার উপায়

রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহারপ্রিয় বন্ধুরা আপনারা কি থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যদি না জানেন তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ুন। কারন এই আর্টিকেলে থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এছাড়াও থানকুনি পাতা চেনার উপায় জানতে পারবেন। তাহলে চলুন থানকুনি পাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং কিভাবে এর উপকারিতা পাওয়া যায় জেনে নেই।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনারা যদি থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে  সম্পূর্ণ ভিজিট করতে হবে তাহলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতা আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ। থানকুনির গাছের ল্যাটিন নাম হল- centella aciatica। ক্ষেতের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা ডোবার বা জলাশয়ের আসে পাশে বেড়ে উঠতে দেখা যায় এই থানকুনি পাতা, এই উদ্ভিদের রয়েছে বহু ঔষুধি গুনাগুণ। থানকুনির পাতা ক্ষত সারাতে, পেটের অসুখ দূর করতে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি এমনকি সৌন্দর্যচর্চায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এই পাতার রস খুবই উপকারী। থানকুনি পাতার কিছু উপকারিতার কথা। কালবেলার অনলাইনের পাঠকদের জন্য আরো কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপকারিতা তুলে ধরা হলো।

থানকুনি পাতা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
থানকুনি পাতাতে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্য়াটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিকাল যা ত্বকের ভিতরের সকল পুষ্টির ঘাটতি দূর করে ও ত্বকের বলিরেখা কমাতে বিশেষ ধরনের ভূমিকা পালন করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন রাখতে থানকুনি পাতার ব্যবহার
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মহৌষধি এই থানকুনি পাতা। এই পাতার রস যদি দিনে দু’বার করে খাওয়া যায় তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে
থানকুনি পাতার মধ্যে থাকে নানা রকম খনিজ উপাদান, আমাদের শরীরে কোন স্থানে কেটে গেলে তা তাড়াতাড়ি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। যে কারণে অনেক জটিল রোগ থেকে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

শরীরে জ্বালাপোড়া দূর করে
থানকুনির ম্যাডেকাসসাইড ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে। এতে ত্বকে সতেজভাব ফুটে ওঠে।

মানসিক অবসাদ দূর করে
মানসিক অবসাদে ভুগলে তা দূর করার জন্য কার্যকর ভেষজ হলো থানকুনি পাতার রস। থানকুনি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে মানসিক চাপ আর অস্থিরতা প্রশমিত হয়। ফলে অ্যাংজাইটির আশঙ্কাও কমে যায়।

জ্বরের আশঙ্কা কমায়
আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে অনেকেরই জ্বর হয়। এই সময়ে নিয়মিত সকালবেলা খালি পেটে এক চামচ করে থানকুনি পাতার রস এবং শিউলি পাতার রস মিশিয়ে পান করলে অতি দ্রুত আপনি জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন এবং শারীরিক দুর্বলতা কমে যাবে এবং জ্বর আশঙ্কা কমে যায়।

হজমে উন্নতি করতে সাহায্য করে
আপনার যদি হজমের সমস্যা হয় তাহলে থানকুনি পাতা আপনাকে সাহায্য করবে। হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। কারণ থানকুনি পাতাতে আছে একাধিক উপকারী উপাদান যা হজমে সাহায্য করবে এবং অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে করে ঠীক মত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখে। এছাড়াও থানকুনি পাতা বদ-হজম, গ্যাস-অম্বলের মত সমস্যা থেকে দূরে রাখে।

যৌন অক্ষমতায় থানকুনি পাতার উপকারিতাঃ
যৌন অক্ষমতায় থানকুনি পাতার উপকারিতা অপরিসীম। প্রতিদিন থানকুনি পাতা খেলে আপনার যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে। যারা যৌন অক্ষমতায় ভুগছেন তাদের থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত। আপনি যদি যৌন অনীহার মতো সমস্যায় ভুগেন তবে রোজ একগ্লাস দুধের সাথে ৭ থেকে ৮ চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খান ,এতে আপনার যৌন অনীহা কেটে যাবে।

পেট এবং লিভার ভালো রাখে
যারা পেটের নানা সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে একটি পাকা কলার সঙ্গে কিছু থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এমনটাই পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। এভাবে নিয়মিত খেলে তা আপনার পেটের স্বাস্থ্য এবং লিভার দুটোই ভালো রাখবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
থানকুনি পাতায় উপস্থিত নানা উপকারী উপাদান রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই পাতার রস খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

আলসার দূর করে
পেটের যে কোনো রোগ প্রতিরোধে থানকুনি পাতা ভীষণ উপকারী। আমাশয় থেকে আলসারের মতো রোগও নিরাময় হয় থানকুনি পাতার খাওয়ার গুণে। এমনকি নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে বদ-হজমজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে সহজেই।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পেন্টাসাক্লিক ট্রিটারপেনস নামের একটি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে ব্রেনসেল চমৎকারভাবে কাজ করতে পারে। স্মৃতিশক্তির উন্নতির সঙ্গে বুদ্ধির ধারও বেড়ে যায়।

ক্ষত নিরাময় করে
যেকোনো ক্ষত দ্রুত নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন থানকুনি পাতা। এর আছে অ্যান্টিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য যা খুব তাড়াতাড়ি ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ক্ষত নিরাময়ের গতি ত্বরান্বিত করতে এবং ত্বকের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শুকনো থানকুনির গুঁড়া দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে? নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করার জন্য চিকিৎসক থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আপনি যদি খাবারের তালিকায় থানকুনি পাতা রাখেন তবে আর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে হবে না।

গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
থানকুনি পাতার রস গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর করতে দারূন উপকারী। আপনি যদি গ্যাস্টিকের সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিচের দেওয়া ঘরোয়া পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন। পদ্ধতিটি হল- ৫০০ গ্রাম বা ১/২ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি ও অল্প পরিমান থানকুনি পাতার রস ভালোভাবে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন। তারপর সেটা অল্প অল্প করে ৭ দিন ধরে সকালে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন আপনার গ্যাস্টিকের সমস্যা দূর হয়ে গেছে।

স্ট্রেচ মার্ক কমাতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গাছে যে ,থানকুনি পাতা স্ট্রেচ মার্ক কম করতে পারে। থানকুনি পাতায় উপস্থিত টারপিনয়েড শরীরে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। যার ফলে নতুন করে স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হতে পারে না।

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ
যারা ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত তাদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া ,তৎক্ষণাৎ যে কোনো কথা বলতে ও বুঝতে সমস্যা হওয়া ,পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা করতে অসুবিধা হওয়া ,প্রতিদিনের কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা বা কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগা ,একটি প্রশ্ন বার বার করা ইত্যাদি নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।তবে নিয়মিত থানকুনি পাতার রস সেবন করলে ডিমেনশিয়া রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ডিটক্সিফিকেশন
থানকুনি পাতার রস শরীরের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। শরীরে টক্সিন থাকলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। আপনি যদি রোজ সকালে খালি পেটে এক চা-চামচ থানকুনি পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন তবে শরীর হবে টক্সিন মুক্ত।

আমাশয়ের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে
আপনার যদি আমাশয়ের সমস্যা হয় তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস টানা ৭ দিন পর্যন্ত খেতে হবে। তাহলেই আমাশয়ের সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন। এছাড়াও আরেকভাবে থানকুনি পাতা খেতে পারেন থানকুনি পাতাকে বেঁটে রস বের করে নিন এবং সেই রসের মধ্যে কিছু পরিমান চিনি মিশিয়ে নিন আর এটি দিনে ২ বার করে খান দেখবেন সমস্যা দূর হবে।

ঠান্ডা কাশি কমাতে সাহায্য করে
থানকুনি পাতার রস খুবই উপকার। তবে মধুর সঙ্গে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য অসুখ সারাতে সাহায্য করে। তুলসি ও গোল মরিচ দিয়ে থানকুনি পাতা খেলে তা ঠান্ডা এবং জ্বরও নিরাময় করে। গলা ব্যথা এবং কাশি নিরাময়ের জন্য, থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে সামান্য চিনি মিশিয়ে পান করুন।

ঘুম ভালো হয়
ঘুম না আসার সমস্যা রয়েছে অনেকেরই। কারও এমন সমস্যা থাকলে খেতে পারেন থানকুনি পাতা ভেজানো পানি। এতে স্নায়ু শিথিল হবে। ঘুমও দারুণ হবে।

চুল পড়া রোধ করে
চুল পড়া নিরোধকারী পণ্যে অনেক সময় থানকুনির নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এর অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

এ ছাড়াও থানকুনি পাতায় থাকা প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মুখের ঘা দূর করে, সর্দির জন্য উপকারী, পেটের অসুখে থানকুনির জুস বেশ কার্যকর। আমাশয়ের পাশাপাশি কাশি ও গলা ব্যথায় থানকুনি পাতার ভেষজগুণ অতুলনীয়।

থানকুনি পাতার অপকারিতা

সব কিছুরই যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতা ও আছে। আমরা ইতোমধ্যে থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। আজ আমরা থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে জানব। নিচে থানকুনি পাতার অপকারিতা দেওয়া হল-
  • প্রয়োজনের বেশী কোন খাবার খাওয়াই উচিত না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। থানকুনি পাতাও তার ব্যাতিক্রম নয়। থানকুনি পাতা প্রয়োজনের বেশী খেলে পেটের ব্যাথা বাড়তে পারে।
  • হঠাৎ করে রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
  • থানকুনি পাতা প্রয়োজনের থেকে বেশী খেলে মাথা ঘুরাসহ নানা রকমের সমস্যা হতে পারে।
  • লিভারের সমস্যা আছে যাদের তাদের কোনভাবেই থানকুনি পাতা খাওয়া ঠিক না। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
  • অপারেশনের রোগীদের থানকুনি পাতা একদমই না খাওয়াই ভালো।
  • থানকুনির পাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের এ্যালার্জি, খোস পাচড়ার সমস্যা হতে পারে।
  • যারা গর্ভবতী মায়েরা আছেন তাদের থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা উভয়ই জানতে হবে। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের থানকুনি পাতা ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

থানকুনি পাতার পরিচিতি

গ্রামবাংলায় থানকুনি পাতা একটি পরিচিত নাম। সাধারণত বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে বা হালকা নরম জায়গায় এ গাছ বেশি জন্মে। মূলত এ গাছের পাতা একটি দারুণ ভেষজ উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভেষজ ঔষধ হিসেবে এ পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকে। এ গাছ দেখতে ছোট ও পাতা গোলাকৃতির হয়ে থাকে।
এই থানকুনি গাছ বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: আদামনি, টেয়া, মানকি, আদানগুনি, ঢোলামনি, আদাগুনানী, মানামানি, ধূলাবেগুন, ডোলামানিক ইত্যাদি।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম - থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়

বর্তমানে অনেক চিকিৎসা প্রায় আপনাদের শরীরের নানান ধরনের সমস্যার দূর করার জন্য থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এই থানকুনি পাতায় রয়েছে অনেক উপকারী উপাদান যার ফলে জ্বর থেকে শুরু করে পেটের সমস্যা এবং দাঁত ব্যথা ও চুল পড়া লিভারের সমস্যা এছাড়াও শারীরিক দুর্বলতা এবং মানসিক টেনশন দূর করতে খুবই কার্যকরী।
কিন্তু আপনারা জানেন না যে এই থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়। তাই আজ আমরা আপনাদের সুবিধার্থে থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নিই থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম।
  • থানকুনির পাতা রস করে খেতে পারেন।
  • থানকুনির পাতা শাক হিসেবে রান্নাঘরে খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতা পিষে পিয়াজি অথবা বড়া করে খেতে পারেন।
  • সকাল সকাল খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
  • প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে থানকুনির পাতা রস খেলে আমাশয় দূর হয়ে যায়।
  • থানকুনি পাতা খাওয়ার আগে সেই পাতাটি আপনাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • থানকুনি পাতা ছোট ছোট করে অর্থাৎ কুচি কুচি করে কেটে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে পাঁচ থেকে ছয় চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে।
  • প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমান থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতি কর উপাদান গুলি সহজে বেরিয়ে যায়। ফলে আমরা একাধিক রোগ থেকে সহজেই রক্ষা পাব।
  • থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম হিসেবে থানকুনি পাতার এবং আলু দিয়ে ভর্তা করে খেতে পারেন এক্ষেত্রে, প্রথমে থানকুনি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর কুচি কুচি করে কেটে নিন। সেদ্ধ আলু গলিয়ে ভর্তা করুন। এর সঙ্গে থানকুনি পাতা কুচি, পিঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, আদা কুচি, লবণ মিশিয়ে নিন। তেল মিশিয়ে পরিবেশন করুন।

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতাতে আছে প্রচুর পুষ্টিগুণ এবং ভেষজ গুনাগুন। থানকুনি পাতার রস বয়স বাড়লেও যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত দুধের সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য বৃদ্ধি পায় এবং আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। গরম জলে চার থেকে পাঁচ চামচ থানকুনি পাতার রস গুলে নিয়ে প্রতিনিয়ত খেতে পারলে যৌবন ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

থানকুনি পাতা চেনার উপায়

অনেকেই আছেন যারা থানকুনি পাতা চেনেন না,কিন্তু উপকারিতা পাওয়ার জন্য খেতে চায়। এমনকি তারা থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে ও জানেনা। থানকুনি পাতা আমরা অনেকেই দেখেছি কিন্তু তার নাম না জানার কারণে ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা কোনটি থানকুনি পাতা। তাই আজ আমরা আপনাদের সুবিধার্থে আলোচনা করব থানকুনি পাতা চেনার উপায় নিয়ে। চলুন থানকুনি পাতা চেনার উপায় কি তা জেনে নেই।
  • থানকুনি পাতার স্বাদ তেতো।
  • থানকুনির গাছ লতাযুক্ত লম্বা।
  • থানকুনি পাতা দেখতে গোল গোল খাঁজকাটা।
  • থানকুনি পাতা একটা পয়সার থেকে কিছুটা বড়।
  • তবে উপকূলীয় লবনাক্ত আবহাওয়ায় এটি ভালো জন্মে
  • থানকুনি পাতা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ও পুকুর পাড়ে বেশী জন্মায়।

থানকুনি পাতা দিয়ে রূপচর্চা - থানকুনি পাতা মুখে দিলে কি হয়

থানকুনি পাতা পেটে ব্যথা, জ্বর, সহ বিভিন্ন ধরনের অসুখে থানকুনি পাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও থানকুনি পাতা দিয়ে আজকাল রূপচর্চটাও করা যায়। চলুন আপনি কিভাবে থানকুনি পাতা দিয়ে রূপচর্চা করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
  • থানকুনি পাতা ত্বককে সতেজ রাখতে ব্যবহার করা হয়। থানকুনিতে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর উচ্চমানের অ্যামাইনো অ্যাসিড যা ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • মুখে ব্রণের দাগ ও ব্রণ কমাতে সাহায্য করে থানকুনি পাতা। অতিরিক্ত সিবাম নিঃসরণ, ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ও লোমকূপ বন্ধ হওয়ার জন্য ত্বকে ব্রণ উঠতে পারে। থানকুনির পাতায় থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান ত্বকের ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের ক্ষত ও জ্বালাপোড়া কমাতে থানকুনি পাতার ম্যাডেকাসসাইড খুবই উপকারী। এটি ব্যাবহারে ত্বকের তাপমাত্রা কমে ও ত্বককে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখে।
  • থানকুনি পাতায় থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন ও ফাইটোক্যামিকেল ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায় ও ত্বকের আর্দ্রতা ও কোমলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে ফলে ত্বকের থেকে বয়সের ছাপ কমে যায়।
  • থানকুনি পাতাতে ফ্ল্যাভোনয়েড ও সক্রিয় উপাদান ম্যাডেকাসসাইড থাকে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও থানকুনি পাতা ত্বককে দূর্ষণ ও সূর্যের রশ্নির হাত থেকে রক্ষা করে। যাতে করে ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। তাছাড়া থানকুনি পাতা ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও রক্তে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায় ফলে ত্বকের নমনীয়তা বাড়ে ও বলিরেখা দূর হয়।
  • চুল পড়া রোধ করতে থানকুনি পাতা বিশেষভাবে উপকারী। থানকুনিতে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যার ফলে চুল পড়া রোধ করে ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

থানকুনি পাতার পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম থানকুনি পাতায় যতটা পুষ্টিগুণ থাকে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো।
  1. ক্যালসিয়ামঃ ১৭১ মিলিগ্রাম
  2. আয়রনঃ ৫.৬ মিলিগ্রাম
  3. পটাশিয়ামঃ ৩৯১ মিলিগ্রাম
  4. ভিটামিন এঃ ৪৪২ মাইক্রগ্রাম
  5. ভিটামিন সিঃ ৪৮.৫ মিলিগ্রাম
  6. ভিটামিন B২ঃ ০.১৯ মিলিগ্রাম

শেষ কথাঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম, থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং থানকুনি পাতার ঔষধি গুনাগুন ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে গিয়েছেন। সম্মানিত পাঠকগণ,এই পোসটি আপনার যদি উপকারে আসে তাহলে এখনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে ফেলুন। এছাড়ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সব আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। পোস্টটি পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাহারাব্লগ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url